মধ্যছদ্দার নিচে উদরগহব্বরে উপরে পাকস্থলীর ডান পাশে যকৃৎ অবস্থিত। এটি মানবদেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি এর রং লালচেয়ে খয়েরি। যকৃতের ডান খণ্ডটি বাম খন্ড থেকে আকারে কিছুটা বড়। প্রকৃত পক্ষে চারটি অসম্পূর্ণ খন্ড নিয়ে যকৃৎ গঠিত। প্রতিটি খন্ড ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোবিউল দিয়ে তৈরী। প্রত্যেকটি লোবিউলে অসংক্ষ কোষ থাকে। এ কোষে পিত্তরস তৈরী করে। পিত্তরস ক্ষারীয় গুন্ সম্পন্ন। যকৃতের বিভিন্ন রকম জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তাই একে রসায়ন গবেষণাগার বলা হয়।
যকৃতের নিচের অংশ পিত্তথলি বা পিত্তাশয় সংলগ্ন থাকে। এখানে পিত্তরস জমা হয়। পিত্তরস গাঢ় সবুজ বর্ণের এবং তিক্ত সাদবিশিষ্ট। পিত্তথলি পিত্তনালীর সাহায্যে অগ্ন্যাশয় নালীর সাথে মিলিত হয়। এটি যকৃৎ-অগ্ন্যাশয় নালীর মাধ্যমে ডিউডেনামে প্রবেশ করে।
যকৃতের কাজ
যকৃৎ পিত্তরস তৈরী করে। পিত্তরসের মধ্যে পানি, পিত্ত-লবন, কোলেস্টরল ও খনিজ লবন প্রধান। এই রস পিত্তথলিতে জমা থাকে। প্রয়োজনে ডিউডেনামে এসে পরোক্ষভাবে পরিপাকে অংশ নেয়। পিত্তরসে কোনো উৎসেচক বা এনজাইম থাকে না। যকৃৎ উদ্ভিত্ত গ্লুকোজ নিজদেহে গ্লাইকোজেনরূপে সঞ্চয় করে রাখে। পিত্তরস খাদ্যের অম্লভাব প্রশমিত করে এবং ক্ষারীয় পরিবেশ সৃষ্টি
করে। এই পরিবেশ খাদ্য পরিপাকে অনুকূল। কেননা আম্লিক পরিবেশে খাদ্য পরিপাক হয় না। পিত্তরস চর্বিজাতীয় খাদ্যকে ক্ষুদ্র দানায় পরিণত করে যা লাইপেজ সহযোগে পরিপাকে সহায়তা করে। অতিরিক্ত এমাইনো এসিড যকৃতে আসার পর বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে ইউরিয়া, ইউরিক এসিড ও এমোনিয়ারূপে নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য পদার্থ তৈরী করে এবং স্নেহজাতীয় পদার্থ শোষণে সাহায্য করে। রক্তে কখনো গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে যকৃতের সঞ্চিত গ্লাইকোজেনের কিছুটা অংশ গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং রক্তস্রোতে মিশে যায়। এভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
No comments:
Post a Comment